Archive for the ‘মহাদেব সাহা’ Category


এখানে মানুষ থাকে, এই নির্দয় নিষ্প্রাণ দেশে,
এই লৌহপুরীতে?
এই শহরের ভিড়ে পাখিদের ওড়াউড়ি নেই,
গাভীর হাম্বা রব কখনো শুনি না;
শুধু অচেনা মানুষের কোলাহল, গাড়ির কর্কশ শব্দ
বাড়ির উঠানে এখানে ওঠে না চাঁদ, নদীময় তারাভরা
দেখি না আকাশ
জুড়ায় না ক্লান্ত দেহ দখিনা বাতাস
এখানে মানুষেরা এক সাথে হেঁটে যায় কেউ কাউকে চেনে না, মানুষ
এখানে থাকে?
ঢের হয়েছে বিদ্যা, ঢের হয়েছে প্রাপ্তি, তবু যেটুকু জীবন
আছে, বুকে নিয়ে
এবার আপন মানুষদের কাছে ফিরে যাবো, গলা
ছেড়ে ডাকবো বাহার কাকা,
কানু ভাই তোমরা কোথায়?
ছি, এখানে মানুষ থাকে, এই সোনার খাঁচায়, ইটের জঙ্গলে,
বন্দিশালায়
হোটেলের বদ্ধ ঘরে, ফ্ল্যাট বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে
বৈদ্যুতিক আলোর এই অন্ধকারে,
এই স্নেহহীন, মায়াহীন, জলবায়ু শুন্য জতুগৃহে?
কতোদিন শুনি না ঘুঘুর ডাক, রাখালের বাঁশি,
টানা বাতাসের শব্দ
দেখিনা সবুজ মাঠ, উধাও দিগন্ত
ঘরের পিছনের ছোট্ট জংলায় দোয়েলের উড়াউড়ি,
কোথাও দেখিনা একটি ধানের শীষে গঙ্গাফড়িং,
লাউ জাংলার পাশে স্থলপদ্ম,
এখানে কী পেয়েছি প্রচুর সুখ, পেয়েছি প্রচুর শান্তি,
এবার অর্ধেক মানুষ আমি খুইয়ে এখানে
সব অনুভুতি, শুদ্ধতা, আনন্দ
সেই আপন মানুষদের কাছে ফিরে যাবো।
সেই বন্ধুগাছ, বন্ধুপাখি, ডোবার কচুরি ফুল,
সেই কাদামাটি জলে ভেজা বাড়ি
কাজলাদিদির কথা লেখা সেই পাঠ্যবই, তোমাদের কারো
কিছুই জানি না;
পাখিরা যেমন আপন পাখিদের সাথে মিশে যায়
আমিও তেমনি আপন মানুষদের মাঝে মিশে যাবো
প্রিয় বৃক্ষ, প্রিয় নদী, আপন মানুষ।


আমি কবিতা লিখবো বলে এই আকাশ
পরেছে নক্ষত্রমালা,
পরেছে রঙধনু-পাড় শাড়ি, অপরূপ চন্দ্রহার
নদীর গহনা পরে আছে গ্রামগুলি,
শুধু আমি কবিতা লিখবো তাই এই প্রকৃতি
পরেছে পুষ্পশোভা,
কানে পরেছে ফুলের দুল, হাতে ঝিনুকের চুড়ি।
মন হুহু-করা এমন উদাস বাতাস, এমন
স্নিগ্ধ বৃষ্টিধারা
এই ঝর্নার মুখর গান, ফুলের সৌরভ
কেবল আমার কবিতার মধ্যে, আমি কবিতা
লিখবো তাই।
আমি কবিতা লিখবো বলে ঘাসে এমন
শিশির মুক্তো
গাছের পাতায় এই ঘন সবুজ রঙ-
রাজহাঁসগুলির এমন আলতা-পরা পা,
শাদা বকের পাখার মতে এই নদীর জল
ফাল্গুনে এমন অগ্নিবর্ণ পলাশ-শিমুল;
আমি কবিতা লিখবো বলে মাছের দুচোখ
এমন রহস্যময়,
জলের শুভ্রতা এমন হৃদয়গ্রাহী।
আমি কবিতা লিখবো তাই শূন্যতার নাম আকাশ
জলের বিস্তারের নাম সমুদ্র,
গাছপালা, জঙ্গলের নাম অরণ্য
জলরেখার ভালো নাম নদী;
আমি কবিতা লিখবো বলে এই আকাশ ও প্রকৃতি জুড়ে
এতো সাজসজ্জা, এতো আয়োজন,
চিরবসন্তোৎসব।


করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই

ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।

চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও …
বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও!

আজো তো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি,
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌঁছে দেবে ….
এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল! …

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি
দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোট নাম,

টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু, হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোন দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বোলো, ভালবাসি !