Posts Tagged ‘poem’


আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেব স্ট্রেটকাটঃ ‘ভালোবাসি’।
এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে ওঠে,
অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়,
আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষ চিরে
তোমার প্রতিমা। দেয়ালে টাঙ্গানো কোন প্রথাসিদ্ধ
দেবীচিত্র নয়, রক্তের ফ্রেমে বাঁধা হৃদয়ের কাচে
দেখবে নিজের মুখে ভালোবাসা ছায়া ফেলিয়াছে।

এরকম উন্মোচনে যদি তুমি আনুরাগে মুর্ছা যেতে চাও
মূর্ছা যাবে,জাগাবো না,নিজের শরীর দিয়ে কফিন বানাবো।

‘ভালোবাসি’ বলে দেব স্ট্রেটকাট, আবার যখনই দেখা হবে।


আমার কিছু স্বপ্ন ছিল, আমার কিছু প্রাপ্য ছিল,
একখানা ঘর সবার মতো আপন করে পাবার,
একখানা ঘর বিবাহিত, স্বপ্ন ছিল রোজ সকালে
একমুঠো ভাত লঙ্কা মেখে খাবার।

সামনে বাগান, উঠোন চাইনি, চেয়েছিলাম
একজোড়া হাঁস, একজোড়া চোখ অপেক্ষমাণ
এই তো আমি চেয়েছিলাম।

স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার, আর কিছু নয়,
তোমায় শুধু অনঙ্গ বউ ডাকার।
চেয়েছিলাম একখানি মুখ আলিঙ্গনে রাখার।

অনঙ্গ বউ, অনঙ্গ বউ, এক জোড়া হাঁস,
এক জোড়া চোখ, কোথায়? তুমি কোথায়?


মানুষের প্রিয় প্রিয় মানুষের প্রানে
মানুষের হাড়ে রক্তে বানানো ঘর
এই ঘর আজো আগুনে পোড়ে না কেন?

ঘুনপোকা কাটে সে-ঘরের মূল-খুঁটি
আনাচে কানাচে পরগাছা ওঠে বেড়ে,
সদর মহলে ডাকাত পড়েছে ভর দুপুরের বেলা
প্রহরীরা কই? কোথায় পাহারাদার?

ছেনাল সময় উরুত দ্যাখায়ে নাচে
নপুংশকেরা খুশিতে আত্মহারা ।

বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
জাতির তরুন রক্তে পুষেছে নির্বীর্যের সাপ-

উদোম জীবন উল্টে রয়েছে মাঠে কাছিমের মতো।

২.
কোনো কথা নেই- কেউ বলে না, কোন কথা নেই- কেউ চলে না,
কোনো কথা নেই- কেউ টলে না, কোন কথা নেই- কেউ জ্বলে না-
কেউ বলে না, কেউ চলে না, কেউ টলে না, কেউ জ্বলে না।

যেন অন্ধ, চোখ বন্ধ, যেন খঞ্জ, হাত বান্ধা,
ভালবাসাহীন,বুক ঘৃনাহীন, ভয়াবহ ঋন
ঘাড়ে চাপানো-শুধু হাঁপানো, শুধু ফাঁপানো কথা কপচায়-
জলে হাতড়ায়, শোকে কাতরায় অতিমাত্রায় তবু জ্বলে না।
লোহু ঝরাবে, সব হারাবে- জাল ছিঁড়বে না ষড়যন্ত্রের?
বুক ফাটাবে, ক্ষত টাটাবে- জাল ছিঁড়বে না ষড়যন্ত্রের?

৩.
আমি টের পাই, মাঝ রাত্তিরে আমাকে জাগায় স্মৃতি-
নিরপরাধ শিশুটির মুখ আমাকে জাগায়ে রাখে
নিরপরাধ বধুটির চোখ আমাকে জাগায়ে রাখে
নিরপরাধ বৃদ্ধটি তার রেখাহীন করতর
আমাকে জাগায়ে রাখে।

মনে পড়ে বট? রাজপথ. পিচ? মনে পড়ে ইতিহাস?
যেন সাগরের উতলানো জল নেমেছে পিচের পথে
মানুষের ঢেউ আছড়ে দোহাই কূলে?
মনে কি পড়ে না, মনে কি পড়ে না, মনে কি পড়ে না কারো?
কি বিশাল সেই তাজা তরুনের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
যেন ছিঁড়ে নেবে গ্লোব থেকে তার নিজস্ব ভূমিটুকু!

মনে কি পড়ে না ঘন বটমূল, রমনার উদ্যান
একটি কন্ঠে বেজে উঠেছিলো জাতির কন্ঠস্বর?
শত বছরের কারাগার থেকে শত পরাধীন ভাষা
একটি প্রতীক কন্ঠে সেদিন বেজেছিলো স্বাধীনতা।
হাতিয়ারহীন, প্রস্তুতি নেই, এলো যুদ্ধের ডাক,
এলো মৃত্যুর, এলো ধ্বংশের রক্ত মাখানো চিঠি।
গ্রাম থেকে গ্রামে, মাঠ থেকে মাঠে গঞ্জের সুবাতাসে
সে-চিঠি ছড়ায় রক্ত-খবর, সে-চিঠি ঝরায় খুন,
স্বজনের হাড়ে করোটিতে জ্বলে সে-চিঠির সে আগুন।

৪.
ভরা হাট ভেঙে গেল।
মাই থেকে শিশু তুলে নিল মুখ সহসা সন্দিহান,
থেমে গেল দূরে রাখালের বাঁশি, পাখিরা থামালো গান,
শ্মশান নগরী, খাঁ-খাঁ রাজপথে কাকেরা ভুললো ডাক।

প’ড়ে রলো পাছে সাত পুরুষের শত স্মৃতিময় ভিটে,
প’ড়ে রলো ঘর, স্বজনের লাশ, উনুনে ভাতের হাঁড়ি,
ভেঙে প’ড়ে রলো জীবনের মানে জ্বলন্ত জনপদে-
নাড়ি-ছেঁড়া উন্মুল মানুষের সন্ত্রাসে কাঁপা স্রোত
জীবনের টানে পার হয়ে গেল মানচিত্রের সীমা।

৫.
মনে কি পড়ে না, মনে কি পড়ে না, মনে কি পড়ে না তবু?
গেরামের সেই শান্ত ছেলেটি কী রোষে পড়েছে ফেটে
বন্ধুর লাশ কাঁধে নিয়ে ফেরা সেই বিভীষিকা রাত
সেই ধর্ষিতা বোনের দেহটি শকুনে খেয়েছে ছিড়ে-

মনে কি পড়ে না হাতে গ্রেনেডের লুকোনো বিস্ফোরণ?
তারও চেয়ে বেশি বিস্ফোরণের জ্বালা জ্বলন্ত বুকে
গর্জে উঠেছে শত গ্রেনেডের শত শব্দের মতো।

গেরামের পর গেরাম উজাড় উঠোনে উঠেছে ঘাস।
হাইত্ নের’ পরে ম’রে পড়ে আছে পালিত বিড়াল ছানা,
কেউ নেই, শুধু তেমাথায় একা ব্যথিত কুকুর কাঁদে।

আর রাত্রির কালো মাটি খুঁড়ে আলোর গেরিলা আসে-

৬.
ঝোপে জঙ্গলে আসে দঙ্গলে আসে গেরিলার
দল, হাতিয়ার হাতে চমকায়। হাত ঝলসায়
রোষ প্রতিশোধ। শোধ রক্তের নেবে তখতের
নেবে অধিকার। নামে ঝনঝায়– যদি জান যায়
যাক, ক্ষতি নেই; ওঠে গর্জন, করে অর্জন মহা ক্ষমতার,
দিন আসবেই, দিন আসবেই, দিন সমতার।

৭.
দিন তো এলো না !
পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ছিঁড়ে নেয়া সেই ভূমি
দূর্ভিক্ষের খরায় সেখানে মন্বন্তর এলো ।
হত্যায় আর সন্ত্রাসে আর দুঃশাসনের ঝড়ে
উবে গেল সাধ বেওয়ারিশ লাশে শাদা কাফনের ভিড়ে,
তীরের তরীকে ডুবালো নাবিক অচেতন ইচ্ছায়।

৮.
আবার নামলো ঢল মানুষের
আবার ডাকলো বান মানুষের
আবার উঠলো ঝড় মানুষের

৯.
গ্রাম থেকে উঠে এলো ক্ষেতের মানুষ
খরায় চামড়া- পোড়া মাটির নাহান,
গতরে ক্ষুধার চিন্ মলিন বেবাক,
শিকড় শুদ্ধ গ্রাম উঠে এলো পথে।

অভাবের ঝড়ে-ভাঙা মানুষের গাছ
আছড়ে পড়লো এসে পিচের শহরে ।

সোনার যৌবন ছিলো নওল শরীরে
নওল ভাতার ঘরে হাউসের ঘর,
আহারে নিঠুর বিধি কেড়ে নিলো সব-
সোনার শরীরে বেচে সোনার দোসর ।

দারুন উজানি মাঝি বাঘের পাঞ্জা
চওড়া সিনায় যেন ঠ্যাকাবে তুফান।
আঁধার গতর জেলে, দরিয়ার পুত
বুকের মধ্যে শোনে গাঙের উথাল ।

তাদের অচেনা লাশ চিনলো না কেউ
ঝাঁক ঝাঁক মাছি শুধু জানালো খবর।

বেওয়ারিশ কাকে বলো, কার পরিচয় ?
বাংলার আকাশ চেনে, চেনে ওই জল
আমার সাকিন জানে নিশুতির তারা,
চরের পাখিরা জানে পাড় ভাঙা নদী
আমি এই খুনমাখা মাটির ওয়ারিশ ।

১০.
স্বপ্ন হারানো মানুষের ঢল রাজপথে আসে নেমে
স্বজন হারানো মানুষের ঢল রাজপথে আসে নেমে
ক্ষুধায় কাতর মানুষের ঢল রাজপথে আসে নেমে
পোড়ায় নগরী, ভাঙে ইমারত, মুখোসের মুখ ছেঁড়ে
ছিঁড়ে নিতে চায় পরাধীন আলো প্রচন্ড আক্রোশে।

১১.
আমি কি চেয়েছি এতো রক্তের দামে
এতো কষ্টের, এত মৃত্যুর, এতো জখমের দামে
বিভ্রান্তির অপচয়ে ভরা এই ভাঙা ঘরখানি?
আমি কি চেয়েছি কুমির তাড়ায়ে বাঘের কবলে যেতে?

আর কতো চাস? আর কতো দেবো কতো রক্তের বলী?
প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে কি তোর লাগেনি লোহুর তাপ?
এখনো কি তোর পরান ভেজেনি নোনা রক্তের জলে?

ঝড়ে বন্যায় অনাহারে আর ক্ষুধা মন্বন্তরে
পুষ্টিহীনতা, জুলুমে জখমে দিয়েছি তো কোটি প্রান-
তবুও আসেনা মমতার দিন, সমতা আসেনা আজো।

১২.
হাজার সিরাজ মরে
হাজার মুজিব মরে
হাজার তাহের মরে
বেঁচে থাকে চাটুকর, পা-চাটা কুকুর
বেঁচে থাকে ঘুনপোকা, বেঁচে থাকে সাপ।

১৩.
খুনের দোহাই লাগে, দোহাই ধানের
দোহাই মেঘের আর বৃষ্টির জলের
দোহাই, গর্ভবতী নারীর দোহাই
এ-মাটিতে মৃত্যুর অপচয় থামা

আসুক সরল আলো, আসুক জীবন
চারিদিকে শত ফুল ফুটুক এবার।

১৪.
জাতির রক্তে ফের অনাবিল মমতা আসুক
জাতির রক্তে ফের সুকঠোর সসতা আসুক
আসুক জাতির প্রানে সমতার সঠিক বাসনা ।

 


এখানে মানুষ থাকে, এই নির্দয় নিষ্প্রাণ দেশে,
এই লৌহপুরীতে?
এই শহরের ভিড়ে পাখিদের ওড়াউড়ি নেই,
গাভীর হাম্বা রব কখনো শুনি না;
শুধু অচেনা মানুষের কোলাহল, গাড়ির কর্কশ শব্দ
বাড়ির উঠানে এখানে ওঠে না চাঁদ, নদীময় তারাভরা
দেখি না আকাশ
জুড়ায় না ক্লান্ত দেহ দখিনা বাতাস
এখানে মানুষেরা এক সাথে হেঁটে যায় কেউ কাউকে চেনে না, মানুষ
এখানে থাকে?
ঢের হয়েছে বিদ্যা, ঢের হয়েছে প্রাপ্তি, তবু যেটুকু জীবন
আছে, বুকে নিয়ে
এবার আপন মানুষদের কাছে ফিরে যাবো, গলা
ছেড়ে ডাকবো বাহার কাকা,
কানু ভাই তোমরা কোথায়?
ছি, এখানে মানুষ থাকে, এই সোনার খাঁচায়, ইটের জঙ্গলে,
বন্দিশালায়
হোটেলের বদ্ধ ঘরে, ফ্ল্যাট বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে
বৈদ্যুতিক আলোর এই অন্ধকারে,
এই স্নেহহীন, মায়াহীন, জলবায়ু শুন্য জতুগৃহে?
কতোদিন শুনি না ঘুঘুর ডাক, রাখালের বাঁশি,
টানা বাতাসের শব্দ
দেখিনা সবুজ মাঠ, উধাও দিগন্ত
ঘরের পিছনের ছোট্ট জংলায় দোয়েলের উড়াউড়ি,
কোথাও দেখিনা একটি ধানের শীষে গঙ্গাফড়িং,
লাউ জাংলার পাশে স্থলপদ্ম,
এখানে কী পেয়েছি প্রচুর সুখ, পেয়েছি প্রচুর শান্তি,
এবার অর্ধেক মানুষ আমি খুইয়ে এখানে
সব অনুভুতি, শুদ্ধতা, আনন্দ
সেই আপন মানুষদের কাছে ফিরে যাবো।
সেই বন্ধুগাছ, বন্ধুপাখি, ডোবার কচুরি ফুল,
সেই কাদামাটি জলে ভেজা বাড়ি
কাজলাদিদির কথা লেখা সেই পাঠ্যবই, তোমাদের কারো
কিছুই জানি না;
পাখিরা যেমন আপন পাখিদের সাথে মিশে যায়
আমিও তেমনি আপন মানুষদের মাঝে মিশে যাবো
প্রিয় বৃক্ষ, প্রিয় নদী, আপন মানুষ।


বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের- তোমরা দু’জন একঘরে পাবে ঠাঁই
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…


জন্মই আমার আজন্ম পাপ, মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই জেনেছি আমি
সন্ত্রাসের ঝাঁঝালো দিনে বিবর্ণ পত্রের মত হঠাৎ ফুৎকারে উড়ে যাই
পালাই পালাই সুদূরে
চৌদিকে রৌদ্রের ঝলক
বাসের দোতলায় ফুটপাতে রুটির দোকানে দ্রুতগামী
নতুন মডেলের
চকচকে বনেটে রাত্রির জমকালো আলো
ভাংগাচোরা চেহারার হদিস
ক্লান্ত নিঃশব্দে আমি হেঁটে যাই
পিছনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা যুবক। অষ্টাদশ বর্ষীয়ার নিপুণ ভঙ্গী
দম্পতির অলৌকিক হাসি প্রগাঢ় চুম্বন
আমি দেখে যাই, হেঁটে যাই, কোথাও সামান্য বাতাসে উড়ে যাওয়া চাল-
অর্থাৎ আমার নিবাস।
ঘরের স্যাঁতসেতে মেঝেয় চাঁদের আলো এসে খেলা করে
আমি তখন সঙ্গমে ব্যর্থ, স্ত্রীর দুঃখ অভিমান কান্না
সন্তান সন্তুতি পঙ্গু
পেটে জ্বালা, পাজরায় তেল মালিশের বাসন উধাও-
আমি কোথা যাই? পান্তায় নুনের অভাব।
নিঃসংগতাও দেখেছি আমি, উৎকন্ঠার দিনমান জ্বলজ্বলে বাল্বের মতোন
আমার চোখের মতো স্বজনের চোখ-
যেন আমুন্ড গ্রাস করবে এই আমাকেই
আমিই সমস্ত আহার নষ্ট করেছি নিমেষে।
শত্রুর দেখা নেই, অথচ আমারি শত্রু আমি-
জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায়
কোথায় ডাক্তার কম্পাউন্ডার
যারা আমাকে অপারেশন করবে?
পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি, কুড়ি টাকায় একসের চাল ও অন্যান্য
সামান্য দ্রব্যাদী মিলবে তো?
আমার চৌদিকে উৎসুক নয়ন আহ্লাদী হাসি
ঘৃণা আমি পাপী
এরা কেন জন্ম নেয়?
এরাই তো আমাদের সুখের বাধা অভিশাপ।
মরণ এসে নিয়ে যাক, নিয়ে যাক
লোকালয়ের কিসের ঠাঁই এই শত্রুর?
-বলে
প্রাসাদ প্রেমিকেরা
আমিও ভাবি তাই, ভাবি নতুন মডেলের চাকায় পিষ্ট হবো
আমার জন্যই তোমাদের এত দুঃখ
আহা দুঃখ
দুঃখরে!
আমিই পাপী, বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ।

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন
চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু’সাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
কোনদিন কর্মহীন পূর্ণো অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যাথিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রানে, বিস্মৃতি প্রাদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নে মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব চেয়ে সত্য মোর সেই মৃত্যুঞ্জয় –
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলাম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশ্যে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।
হে বন্ধু বিদায়।
তোমায় হয় নি কোন ক্ষতি।
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক তাহারি আরতি
হোক তবে সন্ধ্যা বেলা-
পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
তৃষার্ত আবেগবেগে
ভ্রষ্ট্র নাহি হবে তার কোন ফুল নৈবদ্যের থালে।
তোমার মানস ভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাবরসের পাত্র বাণীর ত’ষায়
তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
আজও তুমি নিজে
হয়তো বা করিবে বচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নবিষ্ট তোমার বচন
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
হে বন্ধু বিদায়।
মোর লাগি করিয় না শোক-
আমার রয়েছে কর্ম রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
শুন্যেরে করিব পূর্ণো, এই ব্রত বহিব সদাই।
উ’কন্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সে ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপখক হতে আনি
রজনী গন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে
সে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করূন মুহূর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম,
ওগো নিরূপম,
হে ঐশ্বর্যবান
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান,
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।


তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি,
নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?


অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!


এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?
একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।
এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?
তেমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার । ওটা নয়, ওটা চুল ।
এই হলো আমার আঙ্গুল, এইবার স্পর্শ করো,–না, না, না,
-ওটা নয়, ওটা কন্ঠনালী, গরলবিশ্বাসী এক শিল্পীর
মাটির ভাস্কর্য, ওটা অগ্নি নয়, অই আমি–আমার যৌবন ।

সুখের সামান্য নিচে কেটে ফেলা যন্ত্রণার কবন্ধ–প্রেমিক,
ওখানে কী খোঁজ তুমি ? ওটা কিছু নয়, ওটা দুঃখ ;
রমণীর ভালোবাসা না-পাওয়ার চিহ্ন বুকে নিয়ে ওটা নদী,
নীল হয়ে জমে আছে ঘাসে,–এর ঠিক ডানপাশে , অইখানে
হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক, অইখানে হাতা রাখো, ওটাই হৃদয় ।

অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্পনি ;
অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল তুমিই থাকো নি ।